Wednesday, August 14, 2019

গরুর হাটে একদিন

গরুর হাটে একদিন
--শাহীন মহিউদ্দীন

গার্লফ্রেন্ডের আবদারে গেলাম গরুর হাটে ঘুরতে। হাটে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ফাজলামি করে একটা গরু দাম করে ফেলছি। দাম শুনে বিক্রেতা আমার করা দামেই গরুটি দিতে রাজি হয়ে গেলো। কিন্তু আমি তো গরু নিবোনা। গরু কেনার মতো টাকাও নাই। কিন্তু সঙ্গে গার্লফ্রেন্ড থাকায় বিক্রেতাকে সরাসরি মানা করা যাবেনা। কেননা এটার সাথে ইজ্জতের একটা ব্যাপার স্যাপার ব্যাপকভাবে জড়িত। তবে কোনো না কোনো এক অজুহাতে মানা করতেই হবে।

তাই গরুটি না কেনার উদ্দেশ্যে বিক্রেতা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই এটার মধ্যে পিংক কালারের গরু হবে?’ - এটা জিজ্ঞেস করে আমি শিওর ছিলাম তারা এমন গরু আমাকে দিতেই পারবেনা।
কিন্তু বিক্রেতা হাসিমুখে বললো, জ্বে স্যার আমাগো স্টকেই এই একটাই পিংক কালারে গরু আছে। আপনি অনেক ভাগ্যবান স্যার।
বিক্রেতার জবাবে আমি থ' হয়ে গেলাম। পিংক কালারের গরুও পাওয়া যায়? কোন দুনিয়া বাস করছি আমরা। ভাবা যায়? যাইহোক মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বললাম, না থাক পিংক কালার লাগবে না। তারচেয়ে আপনি বরং তেতুল বিচি কালারে গরু দেখান। - এই বলে আমি মনেমনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলাম। শালায় তেতুল বিচি কালার গরু কই থেকে আনবি আন দেখি। কিন্তু হায়! বিক্রেতা তেতুল বিচি কালারের গরু দিতে অনায়াসে রাজি হয়ে গেলো।
যাক এটাতেও ধরা। কিন্তু কিভাবে মানা করবো তা নিয়ে অনেক্ষণ ভেবে বুদ্ধি করে বললাম, ভাই এটা কেমন যেনো লাগছে। আমার মনে হয় এটার চাইতে আর্মি চেকের গরু হলে ভালো হবে। আছে এমন? - আমার কথা শুনে বিক্রেতা মানা করে বলে দিলো, এমন গরু তাদের কাছে নাই। কিন্তু বিক্রেতার পাশের একজন এগিয়ে এসে বললো, নাই কে বললো? আসেন আমার দিকে। এই বলে সে আর্মি চেকের একটি গরু দেখিয়ে বললো। চলবে এটায়? নাকি আরো আনবো?
শিট! বেঁচেই গেছিলাম। কিন্তু আরেক শালায় সেধে আসছে গরু বিক্রী করতে। এবার সত্যি সত্যিই মস্ত বিপাকে পড়ে গেলাম। কোনোভাবেই বাঁচার মতো অবস্থা নাই। যেই টাইপের গরু চাই, সেই টাইপের গরুই এনে হাজির করে দেয়। এমতাবস্থায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। বিক্রেতাকে বললাম, ভাই আপনার গরুতে চর্বি বেশি, নিবোনা।
বিক্রেতা ফিক করে হেসে দিয়ে হাতে একটা ভিম সাবান ধরিয়ে বললো, এই নেন স্যার ভিম। গরুকে এই সাবান দিয়ে ধুইবেন। দেখবেন, এক ধোয়াতেই তেল চর্বি সব পরিষ্কার।
কি এক মুসিবত। কোনো অজুহাতেই কাজে দিচ্ছে না। শেষমেশ গার্লফ্রেন্ডের কাছে আমার যেই ইজ্জতটা অবশিষ্ট ছিলো সেটাও এবার যায় যায় অবস্থা। এই নিয়ে মহা-টেনশনে আমার অজ্ঞান হওয়ার পালা।
গার্লফ্রেন্ড এতোক্ষণ আমার কাণ্ডকারখানা দেখছিলো। আমার গরুর দামাদামি, কালার চুজ দেখে ব্যাপারটা কি হচ্ছে তা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সে বিক্রেতাকে ডাক দিয়ে বললো, ভাইয়া সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস একটা গরু হবে?

বিক্রেতা অনেক্ষণ মাথা চুলকাইয়া জবাব দিলো, জ্বে না আফা এমন কোনো গরু আমাদের স্টকে নাই। কখনও স্টকে ছিলো বলে মনেও হয়না। আর সারাবাজার খোঁজে এমন গরু একটা পাইবেন কিনা সন্দেহ আছে।
তখন আমার গার্লফ্রেন্ড বিক্রেতাকে বললো, তাহলে দেখি অন্যকোথায় পাই কিনা। না পাইলে আপনারটাই নিবো...

ভালোবাসার সমীকরণ

ভালোবাসার সমীকরণ
--প্রিয়ন্তি মুনা

লোকটা সিগারেটে একটা সুখটান দিতে দিতেই জিজ্ঞেসা করলেন," রাত দশটায় কি কখনো ইন্টারভিউ হয় ,,,,মিস?

-মাথাটা নিচু করেই বললাম, না ! কিন্তু জবটা আমার ভীষণ প্রয়োজন। তাই আন্টির মুখে জবটার ব্যাপারে জানামাত্রই তাদের বাসা থেকে এখানে চলে এলাম। কাল যেহেতু শুক্রবার তাই আপনি হয়তো বাসায় নাও থাকতে পারেন।
লোকটি সিগারেটে অনবরত টান দিয়েই যাচ্ছে। আমাকে একবার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, নাম কি আপনার?জবটা কি সেটা সম্পর্কে কি আপনার কিছু আইডিয়া আছে,,,,,?
- আবারও মাথা নিচু করে বললাম, আমি অন্তি। জবটা কি তা আমি জানি না। আসলে একটা জব ভীষণ প্রয়োজন প্রিয়জনদের জন্য। প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য,একটু মাথা উঁচু করে সমাজে বাঁচার জন্য।
আমাকে থামিয়ে দিয়ে লোকটা বললো, এতো রাতে কোন পুরুষের কাছে ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন, আপনার বাসায় জানতে পারলে আপনাকে কিছু বলবে না,,,?

- মা আমাকে বিশ্বাস করেন তার নিজের চেয়েও বেশি, শুধু সমাজটাকেই ভীষণ ভয় তার। মধ্যবিত্তদেরও অভিনয় করে চলতে হয় সমাজের ভয়ে!
কিন্তু আমাদের মতো নিম্ন বিত্তদের অভিনয় করে চলতে হয় না, জীবনের শুরু থেকেই জীবনসংগ্রাম শিখতে হয়।
লোকটি বললো, আমি ফারহান আহমেদ, আমার একটা সন্তান দরকার। আমি আপনাকে দুই বছরের জন্য বিয়ে করতে চাই, সেটা পারিবারিক ভাবেই ! যেহেতু বাচ্চা ছয়মাস পর্যন্ত তার মায়ের দুধ পান করে তাই বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে রাখা অত্যাবশ্যকীয়। মানে দুই বছর আপনি আমার স্ত্রীর মর্যাদায় এ বাড়িতে থাকবেন। তারপর আপনাকে আর আপনার পরিবারকে সারাজীবন যাতে কোনরকম কষ্টে না থাকতে হয় তার ব্যবস্থাও আমি করে দিবো।

-লোকটি মানে ফারহানের কথায় ভীষন হাসি পেলো আমার। পৃথিবীতে এমন কোনো মেয়ে আছে নাকি যে কিনা জেনেশুনে নিজের সন্তানকে ছেড়ে যাবো সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়,,,! পাগলীও তার সন্তানকে আগলে রাখে পরম মমতায়। আর আমি তো সুস্থ একজন মানুষ !
-আমি দৃঢ় কন্ঠেই বললাম, হয়তো আগে জানলে আপনাকে এতো রাতে বিরক্ত করতে আসতাম না।
-কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দরজা দিয়ে একেবারে বাহিরে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু এ কি, হঠাৎ বৃষ্টি ! ব্যাগে ছাতাও নেই, তারপরে ভীষণ বাতাসে বৃষ্টি যেন উড়ে যাচ্ছে এক পশলায়।
চুপচাপ করে ডুপ্লেক্স বাড়িটার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছি। পাঁচ মিনিট পর এক লোক এসে বললেন, ম্যাম স্যার আপনাকে ভিতরে ডাকছে। আমি কোন কথা না বলে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটি আবার বললো,ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছে, কিছু বলবে আপনাকে।
কি ভেবেই যেনো ভিতরে গেলাম! উনাকে দেখি বিশাল ড্রইং রুমের এক কোনায় রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে আর মনের সুখে সিগারেটে টান দিচ্ছে,,,,
আপনি আমাকে তিনদিন একঘন্টা করে সময় দিতে পারবেন মিস অন্তি,,,? তার জন্য অবশ্য আপনাকে ভালো পেমেন্ট করবো। তিনদিন এই সময়ে আসতে হবে, রাত দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত আমার সাথে থাকবেন।
- পেমেন্ট ভালো পাবার আশায় যদি শরীর শরীর বিলাতে হয় তবে তা অনেক আগেই করতে পারতাম! শুধু শুধু কষ্ট করে টিউশানি করে প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করতাম না। আপনার অফারের জন্য ধন্যবাদ তবে অফারটি আমি গ্রহন করতে পারলাম না।
আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন মিস অন্তি ! তিনদিন আপনার কাছে সময় চাওয়ার মানে এই না যে, আপনাকে শয্যাসঙ্গী করতে চাইছি,,,! আপনি সময় নিয়ে ভাবতে পারেন, আপনার ইচ্ছে হলে আসবেন, নয়তো না !
বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে। আপনি চাইলে লেপ্টে যাওয়া কাজল আর একপাশে আঠা উঠে যাওয়া টিপ খুলে মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বাসায় যেতে পারেন ! কথাগুলো বলেই লোকটি উঠে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন।
আমি রাস্তায় হাঁটছি আর ভাবছি লোকটি মানে ফারহান কেন আমাকে তিনদিন যেতে বললো ? তার কি কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে নাকি এমনি ! ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ি পৌছে গেছি খেয়াল করিনি। মা আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, আজ এতো দেরি করলি যে ?
- মা, কাল থেকে তিনদিন দেরি হবে। একটা জবের ব্যাপারে,,, তুমি আবার টেনশন করো না। মা মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নিয়ে বলেন, এতো রাতে কিসের জব রে,,,,,?
- মা তুমি বিশ্বাস করো না আমায় ?
- বিশ্বাস অর্জন খুবই কঠিন রে কিন্তু বিশ্বাস ভাঙা খুবই সহজ !
পরদিন মিতুকে পড়াতে পড়াতে রাত সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। তারপর বাসে করেই ছুটলাম সেই অদ্ভুত লোকের বাড়িতে। ঠিক দশটায় দরজায় কড়া নাড়তেই এক মধ্য বয়স্ক মহিলা দরজা খুলেই আমাকে ভিতরে ঢুকিয়ে বসতে বলে চলে গেলেন। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে দোতলা থেকে ফারহান বললো,

-অন্তি আজ জোৎস্না দেখতে দেখতে গল্প করবো ! উপরে চলে আসুন তাড়াতাড়ি।
আমি একটু ভয়ে ভয়ে দোতালায় উঠে দেখি একপাশে প্রশস্ত এক বারান্দা। কাছে গেলেই হাসনাহেনা ফুলের সুবাস নাকে এসে লাগে। আমি ফারহানের সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। জোৎস্নার আলোয় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে বারান্দায় রাখা গাছগুলোকে। আমাকে বসতে বলে ফারহান রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে।

-জানেন অন্তি, "ছোটবেলায় মা মারা যাওয়াতে বাবাই ছিলো একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু বাবা ব্যবসায় কাজে প্রায়ই দেশের বাহিরে থাকতেন আর আমি এই বিশাল বাড়িতে রহিমা খালা আর আনোয়ার চাচাকে নিয়ে থাকতাম। তারাই আমাকে আর বাড়িটার দেখাশোনা করতো,এখনো তারাই করে। বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে নষ্ট হতে সময় লাগেনি আমার। ও লেভেল শেষ করার আগেই মেয়েদের সঙ্গ উপভোগ করেছি রাতের পর রাত !
-বাবা বাড়িতে থাকলেও নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন, আমাকে পাশে নিয়ে একটু কথা বলার বা একবেলা একসাথে খাবার খাওয়ারও সময় হতো না তার। যতই বড় হতে থাকি আমার মেয়েদের প্রতি আকর্ষনও বেড়ে যেতে শুরু করে। নিত্য নতুন মেয়েকেই উপভোগ করেছি হোটেলের বিলাসবহুলরুমে নয়তো কোন পল্লীর অন্ধকার ছোট রুমে। এক সময় নিজে নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি এসবে। যেখানে বন্ধু বান্ধব বিয়ে করে সুখে আছে আর সেখানে আমি নোংরামিতে ব্যস্ত থাকি ! ওদের দেখে খুব হিংসে হতো, কবে আমারও একটা ফ্যামিলি হবে! "

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সিগারেটে অনবরত টান দিয়েই যাচ্ছেন তিনি। আমি চুপ করে বসে আছি পরবর্তী শোনার অপেক্ষায়!
রংচায়ে আদার সাথে একটু লেবুর রস, ভীষণ পছন্দ আমার, বলেই দুকাপ চা ঢেলে এক কাপ চা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন ! আমি চা নিয়ে বসে আছি আর তিনি সিগারেট রেখে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। চা শেষ করেই ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন বার বার। আর আমি পরবর্তী শোনার অপেক্ষায় আছি। পিনপতন নিরবতা প্রায় বেশ কিছুক্ষন ! তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, একঘন্টা হয়ে গেছে, আপনি এখন যেতে পারেন ! আমিও কথা না বাড়িয়ে হাত থেকে চায়ের কাপ টেবিলে রেখে নিচে চলে আসি। বাড়ির বাইরে বেরুতেই তার ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আর বলতে থাকে, স্যার আপনাকে বাসায় দিয়ে আসতে বলেছে।
- আমার বাসা পর্যন্ত গাড়ি যায় না। আমি একাই যেতে পারবো।
- স্যার বলেছেন আপনাকে সহিহ সালামত বাসায় পৌঁছে দিতে। আপনি যদি না যান তবে আমার চাকরি থাকবে না। প্লিজ ম্যাম, জলদি গাড়িতে উঠুন।
- বললাম না আমি একাই যেতে পারবো, আমি একা চলায় অভ্যস্ত আছি।
পেছন থেকে ফারহান এসে বললো, আপনার তিনদিনের দায়িত্ব আমার তাই চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসুন। আনিস আপনাকে বাসায় দিয়ে আসবে এই তিনদিন।
ফারহানের কথায় কোনো জবাব দিতে পারিনি। চুপ করে গাড়িতে যেয়ে উঠে বসলাম। তারপর আনিস আমাকে আমার গন্তব্যে নিয়ে গেলেন। যেহেতু বাসা চিপা গলিতে তাই গাড়ি ঢুকলো না , আমার মনে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। ভাবলাম যাক কেউ হয়তো দেখবে না, বাঁচা গেলো। নয়তো মানুষ এতো রাতে আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখলে কত কি যে বলতো !

বাসায় যেয়ে হাতমুখ ধুয়েই শুয়ে পড়লাম। মা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি ? কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর আছে কিনা ?
- কিছুই হয়নি মা। এমনিতেই সারাদিন গরমে অস্থির লাগছে তাই ভালো লাগছে না। এখন আর খাবো না, খুব ঘুম আসছে মা।
পরদিনও মিতুকে তাড়াতাড়ি পড়িয়ে ফারহানের বাসায় গেলাম। আজও সেই প্রশস্ত বারান্দায় চেয়ারে বসে আছি আর ফারহান সেই চিরচেনা রুপে হাতে সিগারেট নিয়ে রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়ে !
আকাশের দিকে তাকিয়ে ফারহান বলতে শুরু করলেন,--"বাবা যখনই জানতে পারলেন আমি বিয়ে করতে চাই তিনি খুব খুশি হলেন। নিজেই আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করলেন। শহরের নামকরা ব্যবসায়ীদের সুন্দরী মেয়েদের প্রস্তাব আসা শুরু করলো আমার জন্য। মেয়েগুলো অনেক সুন্দরী ছিলো একজন আরেকজনের চেয়ে কম না!
কিন্তু আমার মন যেন অন্য কিছু চাইছিলো।

একদিন বন্ধুর মেয়ের জম্মদিনের দাওয়াতে গেলাম।সেখানে নামীদামী মানুষের ভীড়ে এক কোনায় সাধাসিধে সুতি শাড়ি পরিহিতা এক মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটা হয়তো খুব আনইজি ফিল করছিলো তাই এক কোনায় মাথা নিচু করে বসে ছিলো কিন্তু আমার চোখ এতো সুন্দরী সুন্দরী নারীদের রেখে তার সাধারণ সাজেই আকৃষ্ট হয়েছিলো।
আমি শুধু তাকেই দেখছিলাম। কিছুক্ষন পর বন্ধু তার মেয়ে অনন্যার গানের টিচারকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। সেই মেয়েটিই অনন্যার গানের শিক্ষক লাবন্য। একটা সাধারণ মেয়ের মাঝে এতো অসাধারণ একটা প্রতিভা লুকিয়ে আছে, হয়তো লাবন্যর গান না শুনলে জানতামই না। সেই সাধারণ মেয়েটিই আমার মনে জায়গা করে নিলো।
পরদিন বন্ধুর বাড়িতে গেলাম লাবন্য যখন অনন্যাকে গান শিখাতে আসে। যে রুমে গান শিখানো হয় সেখানে বন্ধু আর ভাবিকে নিয়ে বসে বসে লাবন্যর গান শুনলাম মুগ্ধ হয়ে আর ওকে বারবার আড়চোখে দেখছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় লাবন্য একবারের জন্যও আমার দিকে তাকায়নি ! কিন্তু লাবন্যর প্রতি একটা টান অনুভব করছিলাম। হঠাৎ বলেই ফেললাম, লাবন্য আপনাকে বিয়ে করে আমার জীবনসঙ্গী করতে চাই !

ঘটনায় আকস্মিকতায় বন্ধু আর ভাবি বিস্মিত। আর লাবন্য তো মাথা নিচু করেই আছে। ও ওখান থেকে উঠে চলে যাবার সময় হাত ধরে ফেললাম। হাতটা এক ঝটকায় আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো। ভাবি বলে উঠলো, ভাই আপনার মাথা ঠিক আছে তো? আপনার ফ্যামিলির সাথে কোনদিনও মানাবে না, লাবন্য নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে! আমি ভাবিকে বললাম, আমি মানিয়ে নিলে তো কারো কোনো সমস্যা হবার কথা না।
বন্ধুর কাছ থেকে লাবন্যর বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় যেয়ে বাবাকে লাবন্যর কথা বললাম। বাবা বলেলেন, তোমার কোনো কাজেই তো কখনো বাঁধা দেইনি তবে আজও দিবো না।
বাবা তারপরের দিনই লাবন্যর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। ওর পরিবার সত্যিই আনন্দিত হয়েছিলো যে লাবন্যর এমন ঘরে বিয়ে হবে ভেবে। কিন্তু লাবন্য একবার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। বাবা আমার ফোন নাম্বার লাবন্যকে দিয়ে আসে।

রাস্তার পাশে টংয়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি আমি আর লাবন্য। মেয়েটা এখনো মাথা নিচু করেই আছে। মাথা নিচু করেই বলতে থাকে সে কখনোই এই ফ্যামিলির যোগ্য হতে পারবে না। আর কেনো এতো মেয়ে থাকতে তার মতো একটা সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছি,,,?
সাধারণের মাঝেই যে অসাধারণকে খুঁজে পেয়ছি আমি লাবন্য, তাকেই আমার লাগবে জীবনটাকে গুছিয়ে নেবার জন্য । জীবনে অসংখ্য নারীর শরীর ছুয়েছি তবে সেটা ভালোবেসে না। লাবন্য তুমি কি পারবে না আমাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিতে? ভালোবেসে নিজের করে নিতে?
লাবন্য চুপচাপ ! কিছুক্ষন পর জবাব দিলো আপনি যদি আমাকে আপন করে নিতে পারেন তাহলে আমিও পারবো। কথাটা শুনে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেছিলাম। লাবন্যর হাতদুটো নিজের হাতে রেখে কতক্ষণ যে বসে ছিলাম মনে নেই!
সাতদিন পরেই লাবন্য আমার ঘরের বউ হয়ে এলো। প্রতিদিন নতুন করে লাবন্যর প্রেমে পরতাম। আমার অগোছালো, নিয়ন্ত্রণহীন জীবন তখন নিয়মের মধ্যে বাঁধা পড়েছে। একটা পরিবার যে মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা লাবন্য আমার জীবনে না এলে বুঝতে পারতাম না। মেয়েটা বিয়ের আগেও যেমন সাধারণ ছিলো বিয়ের পরও তেমনি ছিলো, কোনো সাজগোজের বাহুল্য ছিলো না। শুধু আমাকে নিয়ে তার যতো আয়োজন ছিলো ! আমাকে আগলে রাখতো ছোট বাচ্চাদের মতো যেনো হারিয়ে না যাই!

প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে সে আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিলো যে আমি বাবা হতে চলেছি ! আমি খুশিতে লাবণ্যকে কোলে নিয়ে সারাবাড়ি মাতিয়ে ফেলি। বাবাও খুব খুশি হয়েছিলো যে সে দাদা হতে চলছে। বাড়ির সবার মধ্যমনি হয়ে ছিলো লাবন্য। প্রতিদিন বারান্দায় একসাথে বসে জোৎস্নাবিলাস, মাঝে মাঝে রাতে নিয়ন আলোতে দুইজন হাত ধরে হাঁটা, টংয়ের দোকানে বসে চা খাওয়া মাঝে মাঝে চা খাওয়া হতো আমাদের।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। সাতমাসের সময় একদিন ছাঁদে উঠতে যেয়ে পা পিছলে নিচে পড়ে যায়। আমাদের সন্তানকে আর বাঁচানো যায়নি আর লাবন্যও কোমায় চলে গেলো। আমি দিন রাত শুধু লাবন্যর পাশেই বসে থাকতাম এই যদি এখনই জ্ঞান আসে তাই ভেবে। নামাজ পরে আল্লাহর কাছে লাবন্যকে ভিক্ষা চাইতাম কিন্তু দশদিন কোমায় থেকে না ফেরার দেশে চলে যায় লাবন্য। "
ফারহান চুপ করে আছে, হাতের সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে। আমার চোখ থেকে পানি পরছে, কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। একঘন্টা হয়ে গেছে মিস অন্তি , আপনি এখন যান। আনিস আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠি।

মা যাতে আমার চোখে পানি না দেখে তাই বাসায় যেয়ে বাথরুমে ঢুকে ভালো করে হাত মুখ ধূয়ে নিলাম। মা কি হয়েছে জানতে চাইলে বললাম, চোখের ভিতর পোকা পড়েছে তাই চোখে ব্যথা করছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম মা আমার পাশে বসে ছিলেন অনেকক্ষণ।
পরদিন আবার মিতুকে পড়িয়ে ফারহানের বাসায় গেলাম। ফারহান ড্রইং রুমেই ছিলো। আমাকে দেখে বললেন, একটু বসুন আমি আসছি। পাঁচ মিনিট পর ফারহান এসেই বললো,উঠুন আমরা আজ রাস্তায় হাঁটবো !
রাস্তায় নিয়ন আলোতে ফারহানকে বেশ সুন্দর লাগছে। এই প্রথম কোনো পুরুষের দিকে ভালো করে তাকালাম। অদ্ভুত একটা মায়া মিশে আছে ফারহানের চেহারায় ! শুধু হাতে ওই সিগারেটটা না থাকলেই হতো।
-- বাবার ইচ্ছে আমি আবার বিয়ে করি, সংসার করি, লাবন্যকে ভুলে যাই!
কিন্তু লাবন্য তো আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে আছে। কিন্তু বাবার শেষ ইচ্ছে একটাই, আমার সংসারী জীবন দেখে যাওয়া। তাই মেয়েদেরকে দুই বছরের বিয়ের কথা বলি যেনো কেউ বিয়েতে রাজি না হয়! কিন্তু কি অদ্ভুত , মেয়েরা রাজি হয়ে যায়, আমার হ্যাঁ এর সাথে হ্যাঁ মিলায়। খুব সুন্দর করে সেজেগুজে আসে আমাকে আকৃষ্ট করতে।

আমি তো লাবণ্যর মতোই কাউকে খুঁজি যে কিনা আবার আমার জীবনটাকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে!
--চলুন চা খাই, মিস অন্তি । এখানের চায়ের স্বাদ খুব ভালো। তারপর আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আসি। আমি কিছুই বলছি না, শুধু তার কথা শুনছি। চা খেয়ে বাসার পথে রওনায়া দিয়েছি। দুইজন দূরত্ব রেখে হাঁটছি !
ফারহান সেই কখন থেকেই চুপ করে আছে আর আমিও কিছু বলছি না।
--বাসায় কাছাকাছি চলে আসলেই তাকে বললাম, চলে এসেছি। এই তিনদিন আমার জীবনে একটা শ্রেষ্ঠ সময় হয়ে থাকবে। আপনি ভালো থাকবেন। আপনার জন্য দোয়া করি যেন লাবন্য আপুর মতো কেউ আপনার জীবনে আবার আসে !
--সব সময় দোয়াতে কাজ হয় না। আপনিও ভালো থাকবেন মিস অন্তি । আমার কোনো ভুল হলে মাফ করে দিবেন। পকেট থেকে দুটো খাম বের করে হাতে দিয়ে বললেন বাসায় যেয়ে খুলে দেখবেন। তারপর চলে গেলেন, একবারও পিছনে ফিরে তাকাননি !

বিদায় নেয়ার সময় মনটা কেনো জানি ছটফট করছিলো।যতক্ষন তাকে দেখা যাচ্ছিল আমি এক দৃষ্টিতে চেয়েই ছিলাম। বাসায় এসে বাথরুমে ঢুকে খাম দুটো খুললাম। একটাতে বিশ হাজার টাকা আর অন্যটায় একটা চিঠি।

চিঠিতে লেখা ছিলো,
অন্তি আমি আপনার মাঝেই লাবন্যকে খুঁজে পেয়েছি । প্রথমদিনে আপনার চোখের ওই লেপ্টে থাকা কাজল আর একপাশের আঠা উঠে যাওয়া টিপ আর আপনার শুকনা মুখ, এগুলো আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে।
আমি আপনার কাছে তিনদিন তিনঘন্টা সময় চেয়েছিলাম কারন আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো আর আমার জীবনটা আপনার কাছে তুলে ধরেছি। লাবন্যকে নিয়ে যে পথে হাঁটছিলাম সেটা হুট করেই থেমে গেছে। ওই পথটায় শুধু আপনাকে নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাঁটতে চাই , যদি আপনার ইচ্ছে থাকে!
আমার শেষ আশ্রয়স্থল আপনি,
আপনাকেই ভালোবাসি
আশায় বেঁচে আছি
একদিন আপনাকে নিয়েই
হেঁটে যাবো বহুদূর,,,,

ঠিক সাতদিন পর কোনো জাঁকজমক ছাড়াই ফারহানের ঘরে এলাম বউ সেজে। একটা নীল শাড়ি, হাতে কাঁচের নীল চুড়ি আর কপালে নীল টিপ পরে বাসর ঘরে বসে আছি। ফারহান কাছে এসেই হাত ধরে বললো,চলো আজ আবার জোৎস্না বিলাস করবো তবে নিয়ন লাইটের আলোতে হেঁটে হেঁটে.... যাবে অন্তি?

সবকিছুই আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে, ফারহানের হাতে হাত রেখে মাথাটা তার বুকে লাগিয়ে বললাম, যাবো বলেই তো এসেছি। নিয়ে চলুন আপনার স্বপ্নের রাজ্যে কিন্তু দুই বছরের জন্য নয়, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আপনাকে আগলে রাখতে চাই....

লৌহমানবী

লৌহমানবী
--মুহতাসিম বাশির কৌশিক

চড় খেয়ে যদি কোন ছেলে, কোন মেয়ের সামনে চুপচাপ বসে থাকতে পারে তবে নিঃসন্দেহে ছেলেটা নোবেল পাওয়ার যোগ্য। আর সেদিক বিবেচনায় এতক্ষনে আমার একটা নোবেল পাওনা হয়ে আছে। পাশে থেকে লোকজন একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। সামনের দিকে গোল হয়ে বসে থাকা মেয়ে গুলোও হেসে কুটি কুটি হচ্ছে...

ব্যাপারটা ঠিকই ছিল। টানা ১৪ দিন ১০ ঘন্টা দেখা না করা আর গত ২৪ ঘন্টায় কোনো ফোন পিক না করার শাস্তি হিসেবেই আজ সকাল ৮ টায় টি এস সি তে আসার কথা ছিল। তবে বরাবরের মত ই ঘুমের বিশ্বাসঘাতকতায় আমি পৌছুলাম সাড়ে দশটায়। সিরিয়াস কিছু একটা বলছিলো, আর আমি অনলাইনে জোকস পড়ে হাসছিলাম। চড়টা হয়তো সেজন্যই।

হ্যান্ডিক্যাপড হয়ে বসে আছি। চশমার ডাট টা ভেঙে গেছে। তাই থাপ্পড়ের জোরটা বুঝে নিতে খুব কষ্ট হয় না। আমি হলাম হুমায়ূন আহমেদের "শুভ্র" টাইপের ছেলে। চশমাই একমাত্র অবলম্বন। তাই এই ট্রাফিক ঠেলে বাসায় যাওয়ার ও সাহস পাচ্ছি না।

কান থেকে ইয়ারফোনটা খুলে শান্ত চোখে আমার দিকে তাকাল। জানি ঝড়ের পূর্বাভাস এটা। চোখ থেকে ভাঙা চশমাটা খুলে সামনে রাখলাম,
-নির্লজ্জের মতো বসে আছো কেন? বাসভাড়া নেই? বাসায় যাও।সবকিছু শেষ।
-সবকিছু মানে? এই সামান্য কারনে??
-তুই উঠবি? নাকি রাহাতকে দিয়ে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে উঠাবো?

মুখের ভেতরটা তেতো হয়ে গেলো। রাহাতের ব্যাপারটা অনেক আগেই সন্দেহ করেছিলাম। প্রমানটা আজই পেয়ে গেলাম। ভাঙা চশমাটা ফেলেই আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম। রাস্তায় নামতেই রিকশার সাথে ধাক্কা খেলাম। চশমা ছাড়া কোনোদিন থাকিনি, হয়তো এজন্যই। মুনার দিকে তাকালাম। আবছা ভাবে চোখে ভাসছে। অন্যদিন হলে এতক্ষনে তুলকালাম বাধিয়ে দিত। আজ শান্ত হয়ে বসে আছে। সবকিছু শেষ হয়তো তাই।

তিক্ত সত্যটা হল, বাসভাড়া আমার কাছে আসলেই নেই। প্যান্টের পেছনের পকেটটা সুন্দর করে কাটা। কাজের প্রশংসা না করে পারছিনা। আবার দুঃখ না করেও পারছিনা। কারন ৫ টাকার একটা কয়েন বাদে কিছুই পাবেনা। টিউশনির সব টাকা টেবিলের কোনায় ডিকশনারির নিচে রাখা। লাজ লজ্জা ভুলে মুনাকে ফোন দিলাম। কলার টিউনটা পাল্টায় নি। টাকা চাইলাম। পাচ সেকেন্ড ঝাড়া নিরবতার পর কথা বলতে লাগল,
-বাবা, মা ফকির? নাকি তুই নিজে?
-তুই করে কেনো বলছো?
-তাহলে কি আপনি করে বলবো?
-লাগবেনা টাকা, রাখি।

সজলকে ফোন দিলাম। বিপদের সময় কিছু বন্ধু ভাল খেল দেখায়। দশ মিনিটের মাথায় বাইক নিয়ে হাজির হয়ে গেল। পচিশ মিনিটের মাথায় বাসায় পৌছে গেলাম। গত চব্বিশ ঘন্টায় ঘুম সর্বসাকুল্য ৩ ঘন্টা। তাই দেনা পাওনার হিসাবটা মিটিয়ে নিতে আরাম করেই পাশ ফিরলাম। মুনার হিসার আগেই বাদ। আমার মত আফ্রিকান নিগ্রোর সাথে যে এতদিন ছিলো, এটাই অষ্টম আশ্চর্য। দেওয়ার বা দেখানোর মত আমার কিছুই ছিল না। টিংটিঙে স্বাস্থ্য , আর একজোড়া নষ্ট চোখ। সেই তুলনায় রাহাত শতগুনে উপযুক্ত। রবীন্দ্রনাথের গান আমার জন্য রীতিমত সিডাটিভের কাজ করে, তাই ঘুমটা বেশ দীর্ঘস্থায়ী ই ছিল। টানা ৬ ঘন্টার ঘুম। মোবাইলটা ডেড হয়ে আছে। চার্জে লাগিয়ে অন করলাম। চশমার কাগজ পত্র আর ফ্রেমের ছবি দিয়ে ছোটটাকে পাঠিয়ে দিলাম। খুশিমনেই গেল। খরচ পড়বে সাতশ টাকা। বাকী তিনশ ওর লাভ। একটু পর আম্মু আসল মোবাইল নিয়ে, কতবার নতুন ফোন দিতে চেয়েছি,তবু সেই নকিয়া ১২০০ ই আকরে ধরে আছে
-এই দেখতো, নাম্বারটা কার
-বা বাহ, ২০ টা মিসকল!! কই ছিলা
-তোর ছোটজন সাইলেন্ট করে রেখেছিলো, টের পাইনি
-তাই নাকি। ইবলিশটার গার্লফ্রেন্ড মনে হয়। দাড়াও ফোন দিয়ে দেখি..

ফোন দিতে হলনা। একুশতম কলের উত্তর করলাম। নাহ, মেয়ে না, সজলের কন্ঠস্বর।
-ওই ছাগল, তুই কই? তোর ফোন কই?
-বাসাতে, কেন কি হয়েছে
-মুনাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, ওর বাবা তো পুরো ঢাকা তল্লাশি চালাচ্ছে..

বুকটা ধ্বক করে উঠলো, মুনার বাবা ডি এস পি। এতক্ষনে নিশ্চয়ই আমার নামে ওয়ারেন্ট বের করে ফেলেছে
-হ্যালো, তুই জানিস? মুনা কই?
-সজল তোর বাইক নিয়ে বাসায় আয়।এক্ষুনি।
-তেল নাই।একটুও
-একহাজার টাকার তেল ভরে দিবো আয়।
-আসছি। পাচ মিনিট।

চিরুনি অভিযান শুরু করেছি। বুদ্ধি করে বাস স্টপেজে গিয়ে বেঞ্চে শুয়ে থাকা এক টোকাই কে মুনার ছবি দেখালাম। তার পরের স্টপেজেও একই কাজ করলাম। আমার ধারনাই ঠিক, মুনা এসেছিল। প্রতিটা স্টপেজেই। কিন্তু এখন ওকেই খুজে পাচ্ছিনা। সজলের বাইককে ক্রস করেই একটা পুলিশের গাড়ি ঝড়ের বেগে টি এস সির দিকে ছুটল। নিশ্চয়ই মুনার বাবা। সজলকেও টি এস সির দিকে যেতে বললাম। মুনার বাবার আগেই পৌছুতে হবে।

নাহ, টিএসসিতে মুনা নেই। কোনো বান্ধবীর বাসাতেও উঠে নি। কি মনে হত সজলকে বললাম।মোহাম্মদপ
ুরের দিকে যেতে। কটমট করে তাকিয়ে বাইক ঘোরাল,

ধারনা অমুলক নয়। ওভারব্রীজের রেলিংয়ের ওপারে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা আকৃতিটা যে মুনার ই, সেটা বলতে জ্যোতিষী হতে হয় না। ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। সেই ভাবলেশহীন মুখ। নিরবতা ভাঙল নিজেই,
-এতক্ষনে?
-পুরো পুলিশ বাহিনী তো আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছো
-ওরা আমাকে খুজছে, তোমাকে না।
-চৌদ্দ শিকের ভেতরে আঠারো ঘা তো তোমার বাবা তো আমার পিঠেই ছুলবে..
-ছুললে তুমি এখানে থাকতে না।

কথাটা আংশিক সত্যি। তাই চুপ করে রইলাম। হঠাত ঘুরে দাড়ালো। বিড়ালের মতো চোখজোড়া জ্বলছে। সুনামির প্রথম আঘাতটা সহ্যর জন্য প্রস্তুত হলাম
-কই ছিলা??
-বাসায়।
-কে নিয়ে গেছে? অনন্যা??
-অনন্যা কেন নিবে? ওতো আমার স্টুডেন্ট, সজল নিয়ে গেছে। ওইতো, নিচেই আছে।
.....উকি দিয়ে সজলকে দেখে নিলো। তারপর ২য় পর্যায় শুরু করলো,
-সজলের সঙ্গে কেন গেছো?
-তা কি করবো? ফোনে যেমনে শুনাইলা। আর কি কিছু করার ছিলো??

৩য় পর্যায় শুরু হওয়ার আগেই সজলকে বিদেয় করে দিলো, আমি বোকার মত চেয়ে দেখলাম। ফোন হাতে নিয়ে সোজা নিজের পুলিশ বাবাকে ফোন দিয়ে বসল
-বাবা, মোহাম্মদপুরের ওভারব্রীজের নিচে লোকমান চাচাকে দিয়ে গাড়ী পাঠাও। সঙ্গে যেন কেউ না থাকে।
-মুনা, তুই..
-বাবা, আমার কিছুই হয়নি। সামান্য কিছু সময়ের জন্য কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। গাড়ীটা পাঠালে ভাল হয়।

আধঘন্টা পর কালো টয়োটা এসে ওভারব্রীজের নিচে দাড়াল। লোকমান চাচাকে আগেই চিনতাম। মুনার নির্দেশে লোকমান চাচা ড্রাইভিং সীট ছেড়ে দিলো..
-চাচা..
-কি মা? বলো?
-এখানে পাঁচশ টাকা আছে, প্লীজ একটু কষ্ট করে বাসায় চলে যান। আমি ড্রাইভ করবো
-কিন্তু মা তুমি তো..
-চাচা, প্লীজ যান। কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হবে না

লোকমান চাচা চলে গেলো। আমি ঠায় দাড়িয়ে আছি। গাড়িতে উঠতে ভরসা পাচ্ছি না। মুনার ড্রাইভিং সস্পর্কে একটু হলেও ধারনা আছে..
-সামনের সীটে এসে বস
-তুমি গাড়ি চালাবে?
-হুম, কোনো সমস্যা??
-নাহ।
-তোমাকে প্রতিটা বাসস্টপে খুজেছি। পাগলের মতো ফোনে ট্রাই করেছি।
-ব্যাটারি ডেড ছিলো।
-তুমি চলে গেলা কেনো?
-তুমিই তো বললে সব শেষ। ভাবলাম রাহাতের সাথে হয়তো স্টার্ট করবে নতুন করে, তাই আর বাধা দেইনি।

মুহুর্তে হার্ডব্রেক করে গাড়ী থামাল। সীটবেল্ট না থাকায় মাথাটা ঠুকে গেল। এবারো ভাবলেশহীন দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করলো
-রাহাতের সাথে শুরু করলে রাত আটটায় মোহাম্মদপুরের এই ওভারব্রীজে আমি থাকতাম?
-নাহ।
পার্সটা খুলে একটা প্লাস্টিকের বাক্স বের করলো, আমার চশমা, নতুন ফ্রেম লাগানো
-চশমাটা পড়ো

গাড়ী আবার চলতে শুরু করেছে, আমার বাসার দিকেই চলছে। রাস্তার হলদেটে আলোয় স্পষ্ট দেখছি, মেয়েটা কাদছে। অঝোরে কাদছে..

থাক খানিকটা কাদুক। আমিই জানালার দিকে মুখ ফিরে দুফোটা পানি সাবধানে মুছে ফেললাম। আমার লৌহমানবী কাদছে, সেখানে আমি কি করে নিজেকে সামলাই...

মেঘ রৌদ্দুরের গল্প

মেঘ রৌদ্দুরের গল্প!

---Md Fojle Rabby

বুকের উপর থেকে শাড়ির আচলটা টান দিতেই মেয়েটা কেমন যেন কেঁপে ওঠল। হাত দিয়ে শাড়ির আচলটা আকটাতে চেয়েও আকটালো না। মেয়েটার চোখের কোণে পানি এসে গেল। মুখটা লালবর্ন ধারণ করেছে। পিংক কালারের লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। দেখেই লিপস্টিকের উষ্ণ ছোঁয়া নেওয়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠছে।
আমার সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! আমার দরকার মেয়েটার শরীর কেনই না? কারণ মেয়েটাকে এক রাতেই জন্য ভাড়া করেছি। দেখতে খুব সুন্দর যে কোন পুরুষের দেখলেই কামতারণা জাগবে।

মেয়েটার বুক থেকে, কাপড়টা সরাতে সরাতে, মেয়েটা চোখ বন্ধ করে নিল, আমি নিজের অজান্তেই মেয়েটার গোলাপের পাপড়ীর মতো ঠোঁটের সাথে ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিলাম! মেয়েটার চোখের কাজলগুলো লেপ্টে যাচ্ছে। কিন্তু আমাকে সরানোর ক্ষমতা তাঁর নেই। কারণ পতিতাদের সে ইচ্ছা থাকলেও ক্ষমতা থাকে না।

হঠাৎ বিছানা কাপতে লাগল। চেয়েই দেখে বালিশের সাইডে, মেয়েটার ফোনটা কাঁপছে।

"কিছু যদি মনে না করেন ফোনটা ধরতে পারি" ( মিনতীর সুরে কথাটা বললো)

আরো কোন জায়গায় কন্টাক্ট রাখছিস নাকি আজকে আরো?সেখান থেকে কী ফোন দিয়েছে? ( আমি)

মেয়েটা কেমন যেন করুণভাবে তাকালো। ( মনে হচ্ছে এই চাহনীর মাঝে যে কেউ নিজেকে মুর্হূতের মাঝেই হারিয়ে ফেলবে)

আচ্ছা! ফোন ধর, তবে আমার সামনে কথা বলতে হবে।( আমি)

মেয়েটা মুচকি হাসলো,চোখের পানিগুলো চিকচিক করছে।

মেয়েটা ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে এক ছোট বাচ্চা কণ্ঠ শুনতে পেলাম।

ফোনের ওপাশ থেকে কে যেন বলছে" আপু তুমি কখন আসবে? জানো আপু মা না কেমন যেন করছে। ডাক্তার আঙ্কেল বলছে" টাকা না দিলে মাকে আর চিকিৎসা করবে না ।মা'কে চিকিৎসা না করলে , মা বাঁচবে না আপু। আপু তুমি কখন আসবে টাকা নিয়ে।.

হ্যাঁ, জান্নাত আমার কলিজার টুকরা আমি না অনেক বড় একটা কাজ করতেছি, কাজটা শেষ হলেই, তোর জন্য চকলেট আর মায়ের চিকিৎসার টাকা নিয়ে আসব। আর আমার ময়নাপাখিটা এখনো ঘুমায়নি কেন? আর হ্যাঁ জান্নাত আজকেও কি তোর কোমড়ের বাম সাইডে ব্যাথা উঠেছিল? ( মেয়েটা)

হ্যা আপু দুপুরে অনেক পেইন করেছিল। পরে ওষুধ এনে দিয়েছিলে না তুমি সেটা খেয়ে ভালো হয়ে গেছে। আচ্ছা! আপু তুমি কি কাজ করো? আমিও করবো, আমরা দু'বোন যদি কাজ করি, তাহলে মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তাই না? আপু বলো না তুমি কি এমন বড় কাজ করছো, এতো টাকা দিবে, বলো না আপু? দু'বোন মিলে কাজ করবো, আমাকে করতে দিবে, তো?( জান্নাত)

মেয়েটার দিকে তাকালাম, মেয়েটা কাঁদছে। যাকে বলে চাঁপা কান্না। চোখের পানি মুছে বলতে লাগল" না আমার ময়নাপাখিটার কাজ করতে হবে না, চুপ আর কোনদিন কাজ করার কথা বলবি না। আমি কি মরে গেছি। তুই কান্না করছিস কেন? জান্নাত তুই একদম কাঁদবি না! ( মেয়েটা)

আপু তুমি কখন আসবে, জানো না তোমার গলা জড়িয়ে না ঘুমালে আমার ঘুম হয় না! ( জান্নাত)

ময়নাপাখি রাগ করো না, আজকে রাতে যে আমার ময়নাপিখিটার সাথে ঘুমাতে পারবো না, । আজ সারারাত কাজ করবো, তা না হলে যে টাকা পাবো না। ( মেয়েটা)

আপু ভাল মেয়েরা রাত জেগে কাজ করে না। মা বলতো না যে" ভালো মেয়েরা সন্ধ্যার পর বাড়ির বাহিরে থাকে না, তুমি কেন বাহিরে থাকবে। আপু তুমি কষ্ট পেয়ো না, জানো আজ আমার টিচার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে বলেছে তুমি নাকি খারাপ কাজ করো। তাই আমাকে পড়াবে না, আমি বলেছি আমার আপু দুনিয়ার শেষ্ঠ আপু। আমার আপু সত্যিই অনেক ভালো আপু। আমি ঠিক বলেছি না? বল আপু তোমার ময়নাপাখি ঠিক বলেছে? আপু যখন তোমার নামে পঁচা কথা বলেছে তখন না আমার খুব কষ্ট হয়েছে। আপু তুমি কখন আসবে, তুমি রাতে যদি না আসো তাহলে খাবো না।( জান্নাত)

আপু তুমি খেয়ে নাও, আমি রাতেই আসবো কেমন। এখন কাজ করতে হবে। ( কথাটা বলে ফোনটা রেখে দিল)

আমি বিছানায় এক কোণায় বসে কথাগুলো শুনছিলাম।

সরি ক্ষমা করবেন, ছোট বোনটার সাথে কথা বলতে গিয়ে লেট হয়ে গেল। কি করবো বলেন, বোনটার কিডনির সমস্যা! আচ্ছা বাদ দেন, রাত দশটা বাজে, কি করবেন করেন, কথাটা বলে শাড়িটা খুলতে লাগল।

আমি, মেয়েটার খুলা শাড়িটা, ফ্লরে থেকে নিয়ে কুচি দিয়ে পড়িয়ে দিলাম।যখনি কুচিটা নাভির নিচে নিজের অজান্তেই গুজে দিতে গেলাম মেয়েটা কারেন্ট শর্ক করার মতো কেমন যেন কেঁপে ওঠল। আমি শাড়িটা পড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার সময় মেয়েটা বলল" কি হলো কিছু করবেন না? আপনার আজ যা মন চাই তাই করতে পারেন, কোন বাঁধা দিবো না। কিন্তু প্লিজ দশ হাজারের কম টাকা দিবেন না। কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

ঠাস- ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম । মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে। এই মেয়ে তোর মতো মেয়ের সাথে আমি রাত কাটাতে পারবো না।
আমার কথাটা শুনে মেয়েটার মাথায় যেন ভাঁজ ভেঙ্গে পড়লো। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল" আমাকে কি পছন্দ হয়নি? প্লিজ আপনার যা মন চায় করুন। আমার টাকাটা খুব প্রয়োজন। এতো রাতো কোন কাস্টমার পাওয়া যাবে না। কথাটা বলেই মেয়েটা পায়ে জড়িয়ে ধরে ফেলল।

আমি আকস্মিক ঘটনায় বিস্মিত হলাম!একটা মেয়ে নিজের সতিত্ব বিক্রি করার জন্য পাঁয়ে পর্যন্ত ধরে, কতটা কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়ালে। মেয়েটাকে পাঁয়ে থেকে তুলে বললাম" আমি আপনার সাথে কন্টাক্টের টাকা'টা ঠিকই দিবো।
তবে, আপনি কেন নিজের ইচ্ছায় নারীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার জন্য আমার পাঁয়ে পড়ছেন। সেই কারণটা বলতে হবে। তা নাহলে এখনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন। ( আমি)

মেয়েটা আমার কথা শুনে চোখের পানি মুছে বলতে লাগল, তাহলে শুনুন কেন আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি মূল্যবান সম্পর্দ বিলিয়ে দিচ্ছি!
" আমার নাম কারিমা জাহান ( কথা)। সবার কথা বলেই ডাকে। গ্রামে জন্ম, আমার বাবা একটা বেসরকারি চাকরিজীবি। খুব ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ আমাদের জীবনে নেমে আসলো অন্ধকারের কালো ছায়া আমি তখন, এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট আসল A+। স্কুল থেকে খুশি মুখে বাসায় এসে দেখি বাড়ি ভর্তি অনেক লোক। লোক সরিয়ে যতই সামনে যাচ্ছি ততই মায়ের কান্না শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎ যা দেখলাম আমার হাত থেকে রেজাল্ট সীর্ট'টা মাটিতে পড়ে গেল। পৃথিবীটা আমার মাথায় উপর ঘুরছে, পায়ের নিচে মাঁটি সরে যাচ্ছে। কারণ মা-বাবার লাশকে সামনে নিয়ে কাঁদছে। ছোট দুই বছরের বোন জান্নাত মায়ের পাশে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। আমি এসব দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। শুনেছি দুইদিন পর জ্ঞান ফিরে। বাবাকে শেষ দেখাটাও হয়নি। কাকারা চক্রান্ত করে বাড়ি ছাড়া করে। শহরে এসে টিউশনি করে কোনমতো, অনার্সটা কমপ্লিট করি। কতো জায়গায় চাকরি খুঁজেছি পায়নি, দুই জায়গায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর প্রস্তাব করেছিল। সেখান থেকে এসে পড়ি। আর চাকরি খুঁজিনি। এদিকে সজিব আঙ্কেলের পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে পড়াতাম। কিন্তু একদিন নিঝুম( আমার ছাএী) তাঁর মায়ের সাথে নানী বাড়ি চলে গেলে, তাঁর বাবা একাই থাকেন। আমি বাসায় গেলে সে সুযোগে, আমার সাথী অশ্লীল কাজ করতে চায় জোর করে। আমি কোনমতে সম্মান নিয়ে পালিয়ে আসি তারপর আর সেখানে যায়নি। হঠাৎ একদিন বোনটা স্কুল থেকে আসার পর সেন্সলেন্স হয়ে যায়, ব্যাথায়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে শুনতে পারি কিডনীর সমস্যা। ছয়মাসের মাঝে কিডনী প্রতিস্হাপন করতে হবে।নইলে ছোট বোনটা বাঁচবে না। এদিকে মা দুই বছর ধরে প্যারালাইস্ট হয়ে আছে। মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা লাগে। দিনে চারটা টিউশনি করায়।তা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা আর সংসার বেশ চলে যেত। কিন্তু ইদানিং মায়ের অসুস্থতা বেড়ে যায়। সাথে বোনটা দিনদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে কালকের মাঝে হসপিটালে যদি দশহাজার টাকা না দিতে পারি, তাহলে মাকে বের করে দিবে। তাই বাধ হয়ে এ কাজে জড়িয়ে নিয়েছি। আর আমার শরীরে প্রথম স্পর্শ কারী আপনি। আজকের রাতের পর চিরদিনি আপনার নামটা হৃদয়ে ক্ষুধায় করা থাকবে। কারণ আপনাকে আমার সতিত্বটা প্রথম বিলিয়ে দিচ্ছি। এখন তো সব শুনলেন। এখন আপনি আমার গায়ে, পতিতার ছাপ লাগিয়ে দিতে পারেন, কোন আফসুস নাই। মা আর বোনের হাসির কাছে আমি শতবার নিজের সতিত্ব বিলিয়ে দিতে পারি। (কথা)

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি, একটা মেয়ে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। হয়তো মেয়েটাকে না দেখলে বুঝতাম না।

আমি মেয়েটার কাছে যাচ্ছি, মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ঘরে প্রবেশ করছে। এক অপরুপ সৌন্দর্য মেয়েটার উপর এসে ভীড় করছে। অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছি, মেয়েটার মাতাল করা চুলের গন্ধ বাতাসে ভেসে আসছে। আমি মেয়েটার অনেক কাছে এখন মেয়েটার নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। মেয়েটা ভাবছে মেয়েটাকে লিপ কিস করবো, মেয়েটার ঠোঁট জোড়া কাপঁছে , চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি খপ করে মেয়েটার শাড়ির আচল'টা ধরে ফেললাম। মেয়েটার চোখ থেকে টুপ-টুপ করে পানি পড়তে লাগল।অামি শাড়ির আচল'টা টান দিয়ে মেয়েটার মাথায় তুলে দিলাম। ঘোমটাতে মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখলাম।

 মেয়েটার কোমড়ের কাছে একটা হাত আমার। আরেকটা হাত মেয়েটার এলোকেশে। আমি মেয়েটার অনেক কাছে চলে এসেছি । এখন মেয়েটার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। মেয়েটা ভাবছে মেয়েটাকে লিপ কিস করবো, মেয়েটার ঠোঁট জোড়াও কাপঁছে , চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
আমি খপ করে মেয়েটার শাড়ির আচল'টা ধরে ফেললাম।
মেয়েটার চোখ থেকে টুপ-টুপ করে পানি পড়তে লাগল।অামি শাড়ির আচল'টা টান দিয়ে মেয়েটার মাথায় তুলে দিলাম।
ঘোমটাতে মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখলাম "

পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে হয়তো মেয়েদের বাঁকা ঠোঁটের হাসি।

আমি জিসান আহম্মেদ রাজ! আচ্ছা আপনাকে কি আমি নাম ধরে ঢাকতে পারি?( আমি)

হুম,আজকে রাতের জন্য আমি শুধু আপনার। আমার শরীরের প্রতিটা অংশের ন্যায্য দাবিদার আপনি! যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন!
.হঠাৎ,ঘরের কাঁটা জানান দিল, রাত ১২ বাজে। কথা বলল" রাত আর বেশি নেই, আমাকে ভোরে চলে যেতে হবে, এখনো আপনিতো কিছুই করলেন না! প্লিজ আর সময় নষ্ট না করে আপনি যে কাজের জন্য এখানে এনেছেন, সে কাজটা পূর্ণ করেন। সময় হয়তো বেশি নেই!( কথা)

ক্ষমা করবেন, আমি পুরুষ তবে কাপুরুষ নই! আপনি ঘুমান আমি আসি!

আজকে রাতের জন্য আমি শুধু আপনার!কথাটা বলে বুকের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে ফেলল।আমার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসল। আমি বুঝতে পারছি, এক অসহায় মেয়ে তাঁর মূল্যবান সম্পর্দ নিজ হাতে আমাকে তুলে দেওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছে । এদিকে কথা আমার কাছে এসেই আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট জোড়া মিলানোর আগেই ধাক্বা দিয়ে ফেলে দিলাম।

আপনাকে না বললাম আপনার সাথে কিছু করতে পারবো না।

আপনি তো আমাকে কন্টাক্ট করেছেন এক রাতের জন্য। আচ্ছা, আমার সাথে কন্টাক্ট করার টাকা'টা তো দিবেন?টাকা টা না হলে মায়ের কিছু একটা হয়ে যাবে। প্লিজ আপনি আমাকে যে কাজের জন্য নিয়ে এসেছেন সে কাজ করেন, তবুও আমার টাকা'টা দেন। ( করুণস্বরে বলল)

বুঝতে পারলাম মেয়েটা, টাকার জন্য এসব করছে। হায়রে পৃথিবী কেউ টাকার জন্য, এসব করে, আবার কেউ আধুনিকতার জন্য।

আমি পকেট থেকে দশ হাজার টাকার ফাইলটা বের করে দিয়ে বললাম" এই নেন টাকা আর ভয় পাইতে হবে না"! আপনাকে একটা কথা বলবো?

পতিতাদের কাছে অনুমতি চাইতে হয় না! বলেন কি বলবেন?

আপনি কি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকতে পারবেন?

একি বলছেন, এ কথা মুখে নেয়াও পাপ! পতিতারা ভোগের পাএী, যত পারেন তাদের ভোগ করেন। তাঁরপর টিস্যুর মতো ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেনন ডাস্টবিনে। পতিতাদের সংসার করার স্বপ্ন তো দূরের কথা কাউকে ভালবাসাও অন্যায়। আমাদেরও ইচ্ছে করে, কাউকে ভালবাসতে। কারো কাঁধে মাথা রেখে চাঁদের জোৎস্না দেখতে। মাঝরাতে গাঁ ঘেষে বসে পুকুরের পানিতে আলতা রাঙা পাঁ ডুবিয়ে প্রিয় মানুষটার মুখে, ভালবাসার গল্প শুনতে। মন চাই একটা ছোট্ট সংসার করত যে সংসারে সবকিছুর অভাব থাকলেও থাকবে না কোন ভালবাসার অভাব। কিন্তু এসব স্বপ্ন দেখি নিছক বোকামী। আমার ছোটবোন, কি বলেছিল শুনছেন" আমার ছোট বোনটাকে নাকি তার টিচার স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে! কেন জানেন? সেই স্কুলের শিক্ষিকা হচ্ছেন সজিব আঙ্কেলের স্ত্রী! আর সজীব আঙ্কেল সেই দিনের ঘটনা উল্টা করে বলেছিল তাঁর স্ত্রীকে। নিশি আন্টি জানে যে আমি তাঁর স্বামীর সাথে অশ্লীল কাজ করতে চেয়েছিলাম। শুনেন আপনার যদি মন চাই আমাকে ভোগ করার যা ইচ্ছা করতে পারেন।যেভাবে ইচ্ছা নিজের কামতারণা মেটাতে পারেন আজকের রাতে।আমি চাইনা আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে আপনাকে জড়াতে। জানেন আজ আমি পতিতা না হয়েও এ অন্ধ সমাজের কাছে কলগার্ল! আল্লাহর কসম, আমার জীবনের আপনিই প্রথম পুরুষ যায় ঠোঁটের ছোঁয়া আমার ঠোঁঠে প্রথম স্পর্শ করেছে। যে আমার শারীরীক গঠন কিছুটা দেখেছে। কিন্তু এ ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না, অসুস্থ মা আর বোনকে বাঁচাতে নিজেকে কুরবাণী দেওয়া ছাড়া।আপনার নামটা আর ছবিটা হৃদয়ে অঙ্কিত করে নিলাম। কাল থেকে হয়তো অন্য কারো বিছানায় নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে সর্পে দিতে হবে। আচ্ছা বাদ দেন, আপনি কাঁদছেন কেন ছেলে মানুষের কাঁদতে হয় না ( কথা)

আমি না হয় কাঁদছি তুমিও তো কাঁদছো। জানো ছোটবেলায় মা মরে যায়! কোটিপতি বাবার এক ঘন্টা সময় হয়নি দিনে আমার সাথে কাঁটাবার। আমার বয়স যখন পাঁচবছর তখন বাবা আরেকটা বিয়ে করে নিয়ে আসে। আমি পেলাম নতুন মা। নতুন মা টা অনেক ভালো ছিল যে, কথায় কথায় আমাকে বলতো তোর মা'টা নষ্টামি করে তোর মতো কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছে। তখন বয়স ৭ বছর একটু বুঝতে শিখেছি। বাবার সাথে কোন কথা বলতাম না। ১১ বছর বয়সে লন্ডনে চলে যায়।পড়ালেখায় সুযোগে, কণা নামের একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। সেখান থেকে ভালোলাগা তাঁরপর ভালবাসা! মনে করেছিলাম, তাঁকে আকড়ে ধরেই নিজের কষ্ট ভুলে থাকবো, কিন্তু না, সে আমাকে ব্যবহার করেছিল,। আজ তাঁর বিয়ে, আজকের রাতেই ফুলশর্য্যা।জানেন তাকে এতটা ভালোবাসতাম তার জন্য কত মেয়েকে ইগনোর করেছি, কখনো কারো দিকে তাকাতাম না! কিন্তু সে কি করলো, অন্য ছেলেকে বিয়ে করে নিলো।

তাই মনের ক্ষুভে ভেবেছিলাম " যদি আজকের রাতটা কারো সাথে কাটানো যায় কষ্টটা যদি লাঘব হয়। তাই আপনার সাথে দেখার, এবং এ পর্যন্ত আসা। কি হলো কাঁদছেন কেন। তবে আপনার মতো, আমিও জীবনের প্রথম আপনার ঊষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম। আচ্ছা আপনি কি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে থাকবেন?( আমি)

মেয়েটা চোখের পানি মুছে বললো" হুম পারি একশর্তে তা হলো, আমাকে সারাজীবন ভালোবাসতে হবে "।
আমি কিছু না বলে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। মনে হচ্ছে এ পাওয়া পরম সুখের পাওয়া, পরম সৌভাগ্যের পাওয়া। দৈহিক মিলনের মাঝে সুখ অাছে, আছে কামতারণা মেটানোর প্রয়াস কিন্তু আত্নিক মিলনের মাঝে আছে পরম শান্তি। যা সকল ভালবাসার উর্ধ্বে। আলতো করে কথার কপালে চুমু একে দিলাম! কথা খুব কাঁদছে আমার শার্টটা তাঁরর চোখের সমুদ্রে নোনা জলে ভিঁজে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি পেয়েছি, তাঁকে, যাকে কবি জীবনান্দ দাশ না দেখে তাঁর সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছিল। দেখতে দেখতে জীবনের শ্রেষ্ঠ রাতটি পার করে দিলাম। পরের দিন সকালে, কথাদের বাসায় গিয়ে কথার মায়ের চিকিৎসা এবং জান্নাতের চিকিৎসার সবকিছু ব্যবস্থা করলাম।

ইনশা-আল্লাহ্ ছয়মাস পর সবকিছু ঠিক-ঠাক। জান্নাত আর কথার মা পুরোপুরি সুস্থ। মোটামুটি খুব জমকালো ভাবেই বিয়েটা হয়ে গেল। আজ আমাদের বাসর রাত। কথার লাল বেনারশি পড়ার কথা থাকলেও, আমার পছন্দমতো নীলশাড়িতে নিজেকে আবৃত্ত করে। নীল চুড়ি, চোখে কাজল সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে নীল পরী। আমি বিছানায় বসতেই আমার পায়ে সালাম করলো। আমি কথাকে নিজের বুকে টেনে নিলাম। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আলতো করে কপালে ভালবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম। আস্তে আস্তে কথার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম।

দিনগুলি ভালোই কাটছিল। কথা অন্তঃসত্ত্বা, খবরটা শুনে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি মনে হয়েছিল। দেখতে দেখতে নয়মাস পার হয়ে দশমাস চলছে! কথা বললো আজ তাঁর শরীরটা "খারাপ লাগতেছে, আমি যেন অফিস না যায়!

বিকালে কথাকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলে, ডাক্তার বললো, অপরাশেন করতে হবে। রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল। অপরেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে কথা শক্ত করে হাঁতটা চেঁপে ধরেছে। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট ছোট্ট করে বলছে" জানো রাজ, আমার না তোমাকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না, আমার খুব ভয় হচ্ছে, আচ্ছা রাজ আমি যদি মরে যায় তাহলে কি তুমি আরেকটা বিয়ে করবে? আমি ভালবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিয়ে দিবে? আমার ভালবাসার ভাগ আমি হারিয়ে গেলে কাউকে দিয়ো না! কথা দাও আমি হারিয়ে গেলে নতুন কাউকে বিয়ে করলেও, তাঁকে কলিজার টুকরা বলে ডাকবে না! কেমন? আমি মনে হয় তোমাকে হারিয়ে ফেলবো! এই কাঁদছো কেন তুমি। আমি মরে গেলেও আমার আত্মাটা তোমায় সবসময় ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে রাখবে।( কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বললো কথা)

এই কলিজার টুকরা, তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারি না, তোমার কিছুই হবে না। তুমি এমন বাজে কথা বলবে না! এদিকে ডাক্তার'রা কথাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে চলে গেল।

আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে পাঁয়চারী করছি, হঠাৎ ডাক্তার দরজা খুলতেই দৌঁড়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম! ডাক্তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো, সরি মিঃ রাজ সন্তানকে বাঁচাতে পারলেও মাকে বাঁচাতে পারলাম না। আপনার স্ত্রী মরার আগে ওয়াদা করিয়ে দিয়েছিল, তাঁর জীবনের বিনিময়ে হলেও তাঁদের সন্তানকে বাঁচাতে। কারণ তিনি আর মা হতে পারবেন না। সরি, আমাদের কিছু করার ছিল না।

ডাক্তারের কথাটা শুনে পায়ের নিঁচের মাটি সরে যেতে লাগল। মনে হচ্ছে কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা করছে। দৌঁড়ে গেলাম কথার বেডে। বাচ্চাটা কথার পাশে রাখা। বাচ্চাটা কাঁদছে, কথার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা। কাপড়'টা তুলতেই চোখ থেকে টপ-টপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।কি সুন্দর মাযাবি মুখখানা মলিন হয়ে পড়ে আছে। কাজল কালো চোখদুটি দিয়ে আর কখনো তাকাবে না আমার দিকে। হাজারো স্মৃতি ভেসে উঠছে স্মৃতির পাতায়।বাচ্চাটা কাঁদছে, হঠাৎ মনে হলো, কথা বলতেছে" আমাদের দুজনের কলিজার টুকরাটাকে বুকে নিবে না! বাচ্চাটার দিকে তাকাতেই দুচোখ ভরে গেল জলে, কি ভাগ্য নিয়ে এসেছিস জন্মের পর মায়ের দুধটুকুও খেতে পারলি না।

আর কাঁদিস না আজ থেকে তোর নাম রৌদ্দুর! তুই যে আমার আষাড়ো ঘনবরষায় বেঁচে থাকার আশার আলো। মেঘের মাঝে তুই যে রোদ্দুর হয়ে আসলি। এই বলে আমাদের দুজনের কলিজার টুকরা ছেলেটাকে গালে মুখে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

বনলতা সেন

বনলতা সেন
--- জীবনানন্দ দাশ
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।